বাণী খুব বিরক্ত হয়ে আছে। গত পাঁচ মিনিট ধরে সবাই চুপচাপ বসে বাণীর দিকে তাকিয়ে আছে।
বাণী বসে আছে টি টেবিলের পাশে সিঙ্গেল সোফায়। তার মামা টি টেবিলের অন্য পাশে ডাবলসোফায়
একা বসে আছেন। হাতে কয়েকটি A4 কাগজ। বাণীর মা বিছানায় বসে আছেন। বাণীর ছোটবোন
বারান্দায় বসে হোম ওয়ার্ক করায় ব্যস্ত। নীরবতা ভেঙে বাণীর মামা মুখ খুললেন, “বাণী, তোমাকে
ঢাকায় একা একা পড়াশোনা করতে দেওয়া হয়েছে। তার মানে এই না যে তুমি যা খুশি তা করে
বেড়াবে। বাণীর মা বললেন, “একটা থাপ্পড় লাগা। তাহলে সব প্রেম ছুটে যাবে। কত্তবড় সাহস।
প্রেমপত্র লিখে সে। আমি বেঁচে থাকতে এসব হবে না।”
বাণী ভ্রু কুচকে বিরক্তি ভাব নিয়ে তার মায়ের দিকে তাকালো। বাণীর মামা বললেন, “আপা, তুমি
চুপ থাকো। রাগারাগি করে লাভ নেই কোনো। আমাকে কথা বলতে দাও।” বাণীর মা বললেন, “কথা
বলে তো কোন লাভ নেই। জুতা দিয়ে কয়েকটা লাগাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কত বড় সাহস তার।
আমার বাসায় বসে প্রেম পত্র লিখে সে। ছোট টারেও নষ্ট বানাবে সে।
বাণীর মনোযোগ তখন শো-কেসে রাখা একটি খেলনা গাড়ির উপর। বাণীকে ছোটবেলায় মাটির বা
প্লাস্টিকের কমদামি পুতুল কিনে দেয়া হতো। অথচ তার ছোট বোনকে দামি স্মার্টফোন কিনে
দেওয়া হয়। কে নষ্ট করছে সেটা ভেবে বাণী মুচকি হাসলো।
“বাণী।” ডাকলেন বাণীর মামা। বাণী হাসি লোপ করে একটা সাধারন দৃষ্টি নিয়ে তাকালো তার
মামার দিকে। বাণীর মামা বললেন, “আমার দিকে তাকাও। এখন এর সমাধান তোমাকেই দিতে
হবে। আমার ভাগ্নি হয়ে তুমি যে এই কাজ করবে সেটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। এখন তুমিই
সমাধান বলো। যেন তুমি ক্ষমা পেতে পারো।”
বাণী মুচকি হাসল। সে তার মামা আর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মাথার মধ্যে কথা গুছিয়ে নিল।
সে বলতে শুরু করল, “প্রথমত, আম্মু তুমি ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে হাত দিয়েছো। আমাকে বড়
করেছে বলেই তুমি আমার ব্যক্তিগত জিনিস দেখার অধিকার পাবে সেটা ভুল। তুমিও অনেক কথা
আমার থেকে গোপন করো। কই আমি তো কখনো তোমার ড্রয়ারে হাত দেই না। নিজের সন্তানের
কাছেও যেমন গোপন কিছু থাকতে পারে তেমনি মায়ের কাছেও গোপন কিছু থাকতে পারে।”
বাণীর মা রাগান্বিত চেহারায় বাণীর মামাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “দেখ, দেখ। ঢাকায় গিয়ে
কেমন বেয়াদবি শিখেছে।” বাণী বলে চললো, “দ্বিতীয়ত। মামা তুমিও ভুল করেছো। তুমিও না
পড়েই বিষয়টা নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছো। আম্মু না হয় দেখেই তার মাথা গরম হয়ে গেছে তাই
পড়েনি, কিন্তু তুমিও সেটা করলে?”
বাণীর মামা বললেন, “আরে শিরোনামই দেওয়া প্যারাডক্সিক্যাল প্রেমপত্র। তারমানে নিশ্চই কোনো
ধাঁধার মাধ্যমে লিখা আছে। শুধু শুধু সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।”
বাণী বলল, “মামা। কেউ প্রেম পত্রের উপরে ঘটা করে শিরোনাম দেয় না। আবার যদিও দেয়
তবে সেখানে প্রেমপত্র লেখা থাকবে না। বুঝলে?”
বাণীর মামা বললেন, “বুঝলাম। তবে জিনিসটা কি?” বাণী বলল, “পড়েই দেখো।”
বাণীর মামা প্রথম থেকে পড়তে শুরু করলেন।
আবর্তমান
বাণী খুব বিরক্ত হয়ে আছে। গত পাঁচ মিনিট ধরে সবাই চুপচাপ বসে বাণীর দিকে তাকিয়ে আছে।
বাণী বসে আছে টি টেবিলের পাশে সিঙ্গেল সোফায়। তার মামা টি টেবিলের অন্য পাশে ডাবলসোফায়
একা বসে আছেন। হাতে কয়েকটি A4 কাগজ। বাণীর মা বিছানায় বসে আছেন। বাণীর ছোটবোন
বারান্দায় বসে হোম ওয়ার্ক করায় ব্যস্ত। নীরবতা ভেঙে ………………………………………………………
কয়েক মাস পরের ঘটনা। বাণীর মামার জন্য পাত্রী দেখতে যাওয়া হয়েছে। বাণীর মামা ও পাত্রী
কে কথা বলার জন্য একটা ঘরে বসানো হয়েছে। দশ মিনিট চুপ থাকার পর পাত্রী নিরবতা ভেঙ্গে
প্রশ্ন করল, “আপনি কি খেতে পছন্দ করেন?” বাণীর মামা বলতে শুরু করলেন, “বাণী খুবই
বিরক্ত হয়ে আছে।”